বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৪৫ পূর্বাহ্ন
ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
করোনাভাইরাসের নির্মমতায় মৃত্যুর প্রহর গুনছে মানবজাতি। এ সময় রমজান এসেছে আলোর দিশারি হয়ে। শান্তির পতাকা হাতে, মুক্তির বার্তা নিয়ে। রমজান মানেই ক্ষমার নহর পাপের ভারে নুয়ে পড়া মানবজাতি এ নহরে ডুব দিয়ে জীবনের সব পাপ-পঙ্কিলতা ধুয়ে মুছে নেবে; এমনটাই চান পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা।
রমজানের দ্বিতীয় দশক মাগফিরাত বা গুনাহ মাফের সময়। মাগফিরাতের এই দশকে মুমিনরা বেশি বেশি ইবাদত, তাওবা করার কথা। জীবনের সব ভুল-ভ্রান্তির জন্য আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত হওয়ার কথা। গুনাহ মাফ চাওয়ার কথা। কিন্তু এ নিয়ে আমাদের অনেকের মধ্যে কোনো ভাবান্তরই নেই। এদিকে স্রোতের মতোই বয়ে যাচ্ছে গুনাহ মাফের সময়। অথচ সেদিকে আমাদের কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই। বরং আমরা যেন রোজাকে বোঝা মনে করছি। কোনো রকমে ঘুম থেকে উঠে সাহরি খেয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ি। অথচ ইচ্ছা করলেই আমরা আরও আধঘণ্টা আগে উঠে দুই রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে পারি। পারি আল্লাহর কাছে দুই হাত তুলে জীবনের সব ভুলত্রুটির মার্জনা চাইতে। তাহলেই আমরা আল্লাহর প্রিয় বান্দায় পরিণত হব। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা, যারা তাদের প্রতিপালকের দরবারে সিজদা করে এবং দাঁড়িয়ে থেকেই রাত কাটিয়ে দেয়।’ (সুরা ফুরকান, আয়াত : ৬৩-৬৪)
সাহরির এ সময়টি দোয়া কবুলের উত্তম সময়। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, নবীজিকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, হে আল্লাহর রাসুল! দোয়া কবুলের উত্তম সময় কখন? রাসুল (সা.) তখন বলেছিলেন, ‘দোয়া কবুলের উত্তম সময় শেষরাত এবং ফরজ নামাজের পর।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৯৯)
দোয়া কবুলের এই সুবর্ণ সুযোগটি আমরা ঘুমিয়ে নষ্ট করে দিচ্ছি। কেউ কেউ তো আছে, মোবাইল, গেম আর ফেইসবুকে পড়ে থেকে পুরো রাত কাটিয়ে দেয়; তবু দুই রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে না। কোরআন তিলাওয়াত করে না। নিজের জন্য, মা-বাবার জন্য কিংবা মৃত স্বজনদের জন্যও ক্ষমা চেয়ে আল্লাহর কাছে দুই হাত তোলে না। অথচ এ সময়টি ইবাদতের জন্য কতই না গুরুত্বপূর্ণ! এ সময় আল্লাহতায়ালা প্রথম আসমানে নেমে আসেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং বলতে থাকেন, কেউ কি আছো, যে আমাকে ডাকবে? আর আমি তোমার ডাকে সাড়া দেব। কারও কি আমার কাছে কিছু চাওয়ার আছে? আমি তার চাওয়া পূরণ করব। কেউ কি আছো আমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী? আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব।’ (বোখারি, হাদিস : ১১৪৫)
আল্লাহতায়ালা তার নিয়ামতের ভাণ্ডার নিয়ে আমাদের ডাকেন। আর আমরা ঘুম কিংবা মোবাইলের কারণে তার সেই ডাকে কর্ণপাতই করছি না। আমরা যদি দোয়া কবুলের এই বিশেষ সময়ে ঘুম কিংবা মোবাইলের পেছনে পড়ে না থেকে, তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তাম, কোরআন তিলাওয়াত করতাম, তাহলে আল্লাহ আমাদের ওপর কতই না খুশি হতেন। আর এই ইবাদতও বিচার দিবসে আমাদের জন্য সুপারিশ করত। হাদিসে এসেছে, ‘রোজা ও কোরআন কিয়ামতের দিন মানুষের জন্য সুপারিশ করবে।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৬৬২৬)
আজকে করোনার ভয়ে আমরা জড়সড়। অথচ এই করোনা আল্লাহতায়ালার একটি হুকুম মাত্র। তাই ভয় করলে, আল্লাহকেই ভয় করতে হবে। যার দেওয়া করোনাভাইরাসে আমরা বিপন্ন, সেই মহান আল্লাহকে খুশি করার শ্রেষ্ঠ সময় ও সুবর্ণ সুযোগ হচ্ছে এই রমজান। যদি এই রমজানেও আমরা নিজেদের গুনাহ মাফ করাতে না পারি, তাহলে আমাদের মতো দুর্ভাগা আর কেউ হবে না। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান পেয়েও তার গুনাহ ক্ষমা করাতে পারেনি, তার নাক ধুলায় ধূসরিত হোক।’ (জামেউল উসুল, হাদিস : ১৪১০)
রমজান মাস শুদ্ধতার মাস। প্রতি বছর রমজান আসে; রমজান যায়। কিন্তু আমরা শুদ্ধ হতে পারি না। রমজান সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি, পরোপকার, সহানুভূতি ও সহমর্মিতার মাস। কিন্তু আমরা রমজানের এই শিক্ষাকে নিজেদের মধ্যে ধারণ করতে পারি না। পারি না বলেই আল্লাহ আমাদের ডাক শোনেন না। আমরা যেদিন প্রকৃত তাওবা করব, তার দেওয়া বিধান মেনে চলার দৃঢ় অঙ্গীকার করব, সেদিনই দূর হবে করোনাভাইরাস। পৃথিবী হবে সুস্থ, মানুষের বসবাসের উপযোগী। তাই আসুন গুনাহ মাফের এই সময়গুলো কাজে লাগাই। যেহেতু আগামী বছর রমজান পাব কি না নিশ্চিত নই, সেহেতু এই রমজানকেই জীবনের শেষ রমজান মনে করি। রমজানের প্রতিটি মুহূর্তকে মূল্যায়ন করি। লেখক-আমিনুল ইসলাম হুসাইনী । সূত্র:দেশরূাপন্তর।
ভয়েস/জেইউ।